Friday 8 May 2015

মাজারে চলছে জম-জমাট ব্যবসা।

মাজারে চলছে জম-জমাট ব্যবসা। সারা ঢাকা শহরে আছে  অসখ্য  মাজার। এর কোন সঠিক হিসেব নেই। পাগলা বাবা থেকে শুরু করে ন্যাংটা বাবা, গাঁজা বাবা, খাজা বাবা, হাঁটা বাবা, বস্তা বাবা এছাড়া আরও বিভিন্ন নামে এরা পরিচিত।এলাকার কোন পরহেজগার ব্যাক্তি আথবা পাগল টাইপের লোক যখন মারা যায় তখন তার মৃতুর পর এলাকার  লোকজন তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এসব মাজার ব্যাবসা শুরু করে। এখনে সাধারন, সহজ সরল লোকজন লোকজন মনোবাসনা পুরনে বাবার নামে মানত করে যা ইসলামে সম্পুরন্য হারাম।

 মারেফাতী দল বা তরীকা পন্থির দল (সকলে নয়) মূলত গড়ে ওঠে স্ব স্ব পীর বা মাজারকে কেন্দ্র করে। বংশের মধ্যে কোন প্রকারে একজন পীর খেতাব ধারণ করতে পারলে বংশানুক্রমে  শত পুরুষ পর্যন্ত এই ব্যাবসা চলে। বংশের মরধ্যে মাজার যত পরিমানে বাড়তে থাকে, পরিবারের আয়-রোজগার তত পরিমানে বাড়তে থাকে। মারফতিদের মতে এটা মাজার নয়, মাজার শরিফ। এই সব মাজারের কলেমা হলো: ‘নারী-পুরুষ হয়ে মাজারে এসো না! ভক্ত হয়ে এসো।’ ফলে মাজার শরীফ হয়ে উঠে নারী-পুরুষের অবাধ  বিচরণ কেন্দ্র। যা ইসলাম সমর্থন করে না। এর ফলে যুবক ও ধনাঢ্য ভক্তদের উত্তরোত্তর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।  এই সুযোগে মাজারের আড়ালে চলে দেহ ব্যাবসা।

ভক্ত বা খাদিমগণ মৃত পীরের মাজারগুলি অঢেল অর্থ খরচ (নিজেদের টাকা নয়) করে শ্বেত পাথর, মার্বেল পাথরে গম্বুজ, মাজার-প্রাসাদ গড়ে তোলেন। বছর বছর মাজারে আতর-গোলাপ জল দিয়ে গোসল, গোলাপ-সামিয়ানা পরিবর্তন, দিনে-রাতে টাটকা ফুল-মালা অর্পণ, আগরবাতি জ্বালিয়ে আকর্শণীয়ভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখেন এবং যথাস্থানে বড় তালা ঝোলা মস্ত বড় লোহার দান বাক্স রাখেন। রাস্তা-ঘাটেও অনুরূপ মিনি বাক্স লটকানো থাকে খাজা বাবার নামে। ওরশ মোবারক তাদের বাৎসরিক মওসুম।এদের স্লোগান হচ্ছে-“খাজা তোমার দরবারেতে,কেউ ফেরেনা খালি হাতে!!!”(নাউজুবিল্লাহ)

খাদেম-ভক্তদের প্রধান প্রচার থাকে যে, ‘বাবা মরেননি, দেহ ত্যাগ করেছেন শুধু। তার দেহ  যেমন ছিল ঠিক তেমনই আছে, কোন দিনও পচবে না। প্রমান স্বরূপ দেহ ত্যাগের দীর্ঘ পরে কোন এক সময় কবর খুঁড়ে অমুক ভক্ত(গণ) স্ব-চক্ষে গুরুর অপরিবর্তিত লাশ  দেখেছেন বলে প্রচারনা চালায়। অন্ধ বিশ্বাসী, দূর্বল,সাধারণ ভক্তগন শুনে আরো দূর্বল হয়ে পড়েন, রুকু সেজদায় পড়ে যান। এমনকি মৃত বাবার ভক্ত(খাদেম) হয়ে পড়েন।

 এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের ক্ষেতুপাড়া গ্রামে। সেখানে কথিত পীরের মাজার কে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে সর্ব রোগের দাওয়াই ব্যবসা। প্রায় দুশ বছর আগে মৃত এক ব্যক্তির কবরকে কেন্দ্র করে, ২-৩ মাস আগে ওই গ্রামের ওমর কাজী এবং তার চাচাতো বোন হাফিজা খাতুন পীরের মাজার বলে প্রচারনা চালান। কল্পিত স্বপ্নাদেশের কথা বলে মাজারের অলৌকিক ক্ষমতার কথাও লোকজনের কাছে বর্ণনা করেন তারা। তারপর থেকেই চিকিৎসা বঞ্চিত ও নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত লোকজন বিশেষ করে নারীরা এখানে কথিত সর্বরোগের দাওয়াই নিতে ছুটে আসছেন গ্রাম থেকে গ্রামে।জানা যায় ওই গ্রামের বাসিন্দা ওমর কাজীর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া একটি জমিতে পুরানা একটি কবর ছিল। কয়েক মাস আগে হঠাৎ একদিন ওমর কাজীর চাচাতো বোন হাফিজা খাতুন প্রচার করেন যে তিনি স্বপ্নে দেখেছেন সেটি একটি পীরের মাজার।

ওমর কাজী ও হাফিজা খাতুন চিকিৎসার শুরুতে লোকজনকে দাওয়াই হিসেবে কথিত পীরের মাজারের মাটি খাওয়াতেন। এতে রোগীরা অসন্তুষ্ট হওয়ায় বর্তমান তারা চাল, তেল ও পানি পড়া দিচ্ছেন। বিনিময়ে রোগীদের কাছ থেকে তারা কোনো টাকা পয়সা নেন না বলে ওমর কাজী দাবি করেন। তবে লোকজন নিজেরাই খুশি হয়ে মাজারে টাকা-পয়সা ও চাল ডাল দিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা জীবনে কোনোদিন নামাজ পড়ে না, রোজা রাখেনা, কোনো সমস্যায় পড়লেই তারা খাজা তথা গাঁজা বাবার দরবারে দৌড় দেয়।  এরা মাজারে  গিয়ে নামাজ পড়ে,কিন্তু  কবরে কি নামাজ পড়া যায়? ইসলামে অনেক প্রাণপুরুষ ছিলেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সৌদিআরবে এতো নবী-রাসূল ছিলেন সেখানে তো কোনো মাজার নেই ?আজ-কাল আবার মাজারে ভিন্নধর্মালম্বী (হিন্দু,খ্রিস্টান) মানুষকেও দেখা যায়, তারা  সেখানে গিয়ে ভক্তি দিচ্ছে! যাদের ইসলামে বিশ্বাস নেই,তাদের আবার মাজারে বিশ্বাস!

চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে এসব ভন্ড পীরদের আস্তানা অত্যধিক বেশি। একই উপজেলায় কয়েকটা থেকে কয়েকশত মাজার আছে।এই দুই নগরিতে পথে ঘাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসখ্য মাজার।

অনেকে বিপদে পড়লে বা বিশেষ কোনো ইচ্ছা পূরণের জন্য,রোগ মুক্তির জন্য, মা-বোনেরা ছেলে-মেয়ে হওয়ার জন্য ইত্যাদি কারণে  পীর বা মাজারের উদ্দেশ্যে গরু, ছাগল বা অন্য পশু মানত করেন। অনেকে আবার এইভাবে উপকার পেয়ে এইগুলোরপ্রতি আরো বেশি ঝুঁকে পড়েন,ইসলামের কথা আর শুনতে বা বুঝতে চান না, ঐ পীরবা মাজার নিয়েই তারা পড়ে থাকেন। এর ফলে প্রতি বছর তারা, টাকা-পয়সা গরু-ছাগল মাজারে দিয়ে আসেন, ওরস করেন, মাজারে চাদর ছড়াবেন ইত্যাদি। চলুন পীর বা মাজারেরনামে পশু মানতকরা সম্পর্কে ইসলামকি বলে তা জেনে নিই। আলী (রাঃ)বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)কে বলতে শুনেছি -"যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যকারো উদ্দেশ্যে পশু জবাইকরে তার উপরে আল্লাহর অভিশাপ,যে ব্যক্তি কোন বিদ’আতীকে আশ্রয় দেয় তারউপরে আল্লাহর অভিশাপ,যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেয় তারউপরে আল্লাহর অভিশাপ, এবং যে জমিনের চিহ্ন বা সীমানা পরিবর্তন করে তার উপরে আল্লাহর অভিশাপ”। সহীহ মুসলিম।

এসব ভন্ড পীরদের ধর্ম ব্যবসা বন্ধ করতে ইসলামের মৌলিক জ্ঞান তাদের নিকট পৌঁছানো প্রয়োজন। প্রথমত মানুষকে সচেতন করতে পারলে এই  ধর্ম ব্যবসা উঠে যাবে।মূল কথা হচ্ছে, আল্লাহ্‌'র কাছে কিছু চাইলে কোনো মাধ্যম লাগে না। আল্লাহ্‌'র সাথে বান্দার সরাসরি নেটওর্যাক আছে। একটু সচেতন হলে আর একটু ভাবলেই পুরো ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে যাবে।

No comments:

Post a Comment